বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ_ভাণ্ডার।

#শব্দ_ভাণ্ডার৷

অর্থযুক্ত ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। মনের ভাব প্রকাশের জন্য এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে অর্থবোধক হলে তা শব্দ বলে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন দিক থেকে বাংলা ভাষার শব্দ সমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা ঃ-
 ক. উৎসগত বা উৎপত্তি অনুযায়ী – ৫ প্রকার ।
১। তৎসম/সংস্কৃত শব্দ ২। অর্ধ-তৎসম শব্দ
৩। তদ্ভব শব্দ ৪। দেশি শব্দ
৫। বিদেশি শব্দ

বর্তমানে অর্ধতৎসম শব্দ বাদ দেয়া হয়েছে।

 খ. গঠনগত অনুযায়ী – ২ প্রকার। ১. মৌলিক শব্দ ২.সাধিত শব্দ
 গ. অর্থগত অনুযায়ী – ৩ প্রকার।
১. যৌগিক ২.রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ৩. যোগরূঢ় শব্দ

উৎসগত বা উৎপত্তি অনুযায়ী
বাংলাদেশে তুর্কি আগমন ও মুসলিম শাসন পত্তনের সুযোগে ক্রমে প্রচুর আরবি ও ফারসি শব্দ বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে।
উৎসগত বা উৎপত্তি অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভারকে পগিুতগণ ৫ ভাগে ভাগ করেছেন।
১। তৎসম/ সংস্কৃত শব্দ ২। অর্ধ – তৎসম শব্দ
৩। তদ্ভব শব্দ ৪। দেশি
৫। বিদেশি

তৎসম শব্দ

তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ। তৎ অর্থ তার সম অর্থ সমান, তৎসম অর্থ সংস্কৃতের সমান।
১। সাধু ভাষার ৮৫% শব্দই তৎসম শব্দ।
২। কোন শব্দের সাথে ণ, ষ, যুক্ত থাকলে তা কোন চিন্তা ছাড়াই তৎসম শব্দ হবে। যেমন : চাণক্য, মাণিক্য, ঋণ, তৃণ, মানুষ, পাষাণ (তবে বোষ্টম শব্দটি অধৃ-তৎসম শব্দ) চন্দ্র=চন্দ = চাঁদ
আষাঢ়ের ঊষাকালে সারিষা খেতে মহিষ চড়ে। পঙ্গু মানুষেরা রোষ ভুলে ষোড়শ ভ’ষণ ,্ওষুধ ,পোশাক পড়বে সে আগামী পৌষে
ভাষা
@ যে সকল শব্দে যুক্তবর্ণ – ক্ষ, হ্ম,ঞ্চ,জ্ঞ,ষ্ণর্,, ্র, ্য, ত্র,স্ব,দ্ধ ব্দ ইত্যাদি শব্দের মধ্যে থাকলে ৯৮ ভাগ । পঞ্চাশ , ছাত্র, শিক্ষক,
স্ত্রী, স্বামী , কণ্যা , পুত্র, বৈষ্ণব ধর্ম, কর্ম ইত্যাদি ।
@ তৎসম সন্ধিগঠিত শব্দ = বিদ্যালয় .
@ তৎসম প্রত্যয় গঠিত শব্দ = সাহিত্যিক , মানুষ মনু + ষ্ণ , নয়ন , নর্তন ,
@ তৎসম উপসর্গ
৩। ক্ষ, যুক্ত শব্দ কোন চিন্তা ছাড়াই তৎসম শব্দ । যেমন (নক্ষত্র, চক্ষু, বক্ষ, শিক্ষা ইত্যাদি)।
৪। ক্ষ্ম যুক্ত শব্দ কোন চিন্তা ছাড়াই তৎসম শব্দ । যেমন যক্ষ্ম।
৫। ক্ষè যুক্ত শব্দ কোন চিন্তা ছাড়াই তৎসম শব্দ । যেমন – তৃক্ষèা।
৬। তৎসম উপসর্গ যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ। অর্থাৎ তৎসম উপসর্গ আছে মোট ২০টি। যথা – প্র, পরা, অপ, সম্, নি, অনু, অব, নির, দুর, বি, আধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অতি, অপি, অভি, উপ, আ। এই উপসর্গগুলো সাধারনত তৎসম শব্দের আগেই বসে, তাই যত গুলো শব্দের আগে বসবে তার সবগুলোই তৎসম শব্দ। যেমন (প্রভাব, পরাজয়, অপমান, সমৃদ্ধ)।
৭। তৎসম সন্ধি সমূহ কোন চিন্তা ছাড়াই তৎসম শব্দ । (মনে রাখবে বিসর্গ সন্ধি সমূহ কেবল তৎসম শব্দেই আছে, আর তাই সকল বিসর্গ সন্ধি সমূহের সবগুলোই তৎসম শব্দ)।
যেমন :- বাচস্পতি, ভাস্কর, অহর্নিশ, অহরহ, ইত্যাদি।
৮। তৎসম প্রত্যয় সমূহ কোন চিন্তা ছাড়াই তৎসম শব্দ । যেমন:- (কারক, শ্রাবন, সাহিত্যিক, হৈমনতিক)।
৯। ভূ-মণ্ডল সম্পর্কিত শব্দগুলোর বেশির ভাগই তৎসম শব্দ। (চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র,)। এছাড়া ভবন, ধর্ম, পাত্র।
যেমন – গ্রহ , নক্ষত্র , বৃক্ষ, লতা, জীবন, পুরুষ, নারী, নদী, পর্বত, ভ্রাতা, ভগ্নী, সকাল, বিকাল, প-িত, মূর্খ, জল, বায়ু, অল্প,বহু, অদ্য, কল্য, ধর্ম, কর্ম, জয়, মুক্তি, পত্র, পুষ্প ইত্যাদি।
ছন্দে কিছু তৎসম শব্দ মনে রাখার উপায়
জলবায়ু ও নদী অঞ্চলেসুন্দর বৃক্ষলতা ও পুষ্প পদ্যের গৃহ দেখা যায়,সেখানে সকাল বিকালঅন্ন বস্ত্রের ক্ষুধায়, নর- নারীর জীবন মৃত প্রায় হয়ে চন্দ্র সূর্যের মত গমন করে,তখনি মনুষ্যপাত্র-পুত্রস্বামী চর্মকার ও স¤্রাট তাদের গৃহিণীকে বৈষ্ণব সাজিয়ে ধর্ম কর্ম করে মুক্তি লাভের চেষ্টা করে।

অর্ধ-তৎসম শব্দ

মূল তৎসম অর্ধ-তৎসম
জ্যোৎস্না > জোছনা
গ্রাম > গেরাম
গৃহিণী > গিন্নী/ গিন্নি
শ্রাদ্ধ > ছেরাদ্দ
নিমন্ত্রন > নেমন্ত্রন/নেমন্তন
প্রাণ > পরান
ঝর্ণা > ঝরনা
রত্ন > রতন
চন্দ্র > চন্দ
স্বর্ণ > সোনা
তারকা > তারা
সূর্য > সুরুজ
ছত্র > ছাতা
বৃষ্টি > ডবষ্টি
প্রীতি পিরীতি

তদ্ভব শব্দ

যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত রূপে বাংলায় ব্যবহৃত হয় তাকে তদ্ভব শব্দ বলে। তদ্ভব হলো খাঁটি বাংলা শব্দ এবং বর্তমান বাংলা ভাষার মূল উপাদান হিসেবে এগুলো বিবেচ্য। বাঙালির প্রতিদিনের জীবনের ব্যবহৃত অধিকাংশ শব্দই তদ্ভব শব্দ। ডঃ মুহাম্মদ এনামুল হক মনে করেন যে, বাংলাভাষার খ্যাতনামা লেখকের রচনার শতকরা ৬০ ভাগ শব্দই তদ্ভব শ্রেণীর অন্তর্গত।
 শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাম, ব্যক্তিগত সমন্ধবাচক শব্দ, পেশাবাচক শব্দ, পশুপাখি ও প্রাকৃতিক বস্তুর নাম, ঘর-সংসারের জিনিস পত্র, সংখ্যাবাচক শব্দ, তারিখ, সর্বনাম, ক্রিয়াবাচক শব্দ, অব্যয়, বিশেষণ ইত্যাদি অসংখ্য জাতের শব্দ প্রধাণত তদ্ভব শ্রেণীভুক্ত। যেমনঃ হাত, পা, চোখ, কান, মা, বাপ, মামা, জেঠা, গরু, ঘোড়া, উঠ, হাতি, সোনা, রূপা, আম, ছাতা, বাতি, এক, পোয়া, সাড়ে, পয়লা, আমি, তুমি, সে, চলে, নাচে, ভাল, হালকা, পাতলা,কামার,কুমার,ইত্যাদি।

মূল তৎসম প্রাকৃত তদ্ভব
মস্তক >……..> মাথা
দন্ত >……..> দাঁত
চন্দ্র >……..> চাঁদ
হস্ত >……..> হাত
চর্মকার >……..> চামার
মৃত্তিকা >……..> মাটি
দধি >……..> দই
ভ্রান্ত >……..> ভুল
মৎস্য >……..> মাছ
ভদ্র >……..> ভাল
বাটী >……..> বাড়ি
চক্ষু >……..> আঁখি
বক্ষ >……..> বুক
স্থান >……..> ঠাঁই
চক্র >……..> চাক
গাত্র >……..> গা
বিশেষ দৃষ্টব্য : তদ্ভব শব্দের অপর নাম খাঁটি বাংলা শব্দ কিন্তু খাঁটি বাংলা শব্দ আর দেশি শব্দ এক নয়।

দেশি শব্দ

আমাদের দেশে আমাদের পূর্বে অনার্যরা বসবাস করত। তাদের রেখে যাওয়া ভাষাকেই অথবা অনার্য বা দ্রাবিড ভাষা থেকে যে সব শব্দ বাংলায় এসেছে তাদেরকে দেশি শব্দ বলে।
যেসব শব্দ এদেশের আধিম অধিবাসী অনার্যদের ভাষা থেকে বাংলায় স্থান পেয়েছে সেগুলোকে দেশী শব্দ বলে।
যেমন – পেঠ, ঢেঁকি, ঢোঙা, কুড়ি,কুলা,খড়, ঝিঙা, ঝাঁটা, ডিঙি,চুলা, ঢোল, মই, বাদুড়, বাখারি, খোকা, খুকি, খোঁচা, ঝোল, ঢিল, ঠোপর,নেড়া, মেকি, ভাব,খাঁদা, বোঁচা, ঝিনুক, কাতলা, চিংড়ি, খোঁজ, চাউল, চাঠাই, কালা, বোব, গঞ্জ,মুড়ি,মাঠ,ঝিঙা,উচ্ছে ইত্যাদি।
১। বাংলাদেশের আদিম অধিবাসিদের ( যেমন :- কোল, মুণ্ডারী প্রভৃতি) ভাষা।
২। সমাজের নিম্নস্তরের ভাষা , কামার, কুমার, ও জেলেদের ভাষা।
৩। অনার্য জাতির ভাষা।
যেমন: ঢেঁকি, কুলা, (মুণ্ডারী ভাষা), চুলা, চাল, ডাল, পেট (তামিল ভাষা), কুড়ি (কোল ভাষা) ডাগর, ডাব, জারুল, জলপাই, ডিঙ্গি, টোপর, পঞ্জ, ঢোল।

Related  অব্যয়ীভাব সমাস।

ছন্দে কিছু দেশি শব্দ মনে রাখার উপায়
আর্য জাতি কৈ কাতলা ও চিংড়ি মাছের ঝোলে ভাত খেয়ে খড় মাঠে যায়, মাঠ থেকে টেপারি, ভরে ঝিঙে, উচ্ছে,থানকুনি, ও ডাব নিয়ে একটা চোঙ্গা ডিঙ্গায় তোলে গঞ্জে যায়। গঞ্জ থেকে টোপর, কুলা, ডাগর ও ঢেঁকি,ঢোল কিনে বাড়ি ফিরে যায়।

বিদেশি শব্দ

রাজনৈতিক ওলট-পালটে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাষাভাষীর শাসক বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছেন এবং বাংলা ভাষাকে তারা নিজ নিজ ভাষা দ্বারা প্রভাবিত ও সমৃব্ধ করেছেন। এক ভাষার উপর অন্য ভাষার প্রভাবের ক্ষেত্রে – ধ্বনিতাত্ত্বি¡ক, রূপতাত্ত্বিক, পদবিন্যাস ও শব্দার্থ তত্ত্বের প্রভাব ছাড়াও বিভিন্ন ভাষার শব্দ বাংলা ভাষায় অনুপ্রবেশ ঘটে। এইসব ভাষাকেই বিদেশী ভাষা বলে। এ গুলোকে এখন আর অন্যের শব্দ বলে মনে হয় না।

আরবি

 আরবি শব্দ দুই ভাবে বাংলা ভাষায় এসেছে।
১। ধর্ম ২। প্রশাসনিক/ সাংস্কৃতিক
গুরুত্বপূর্ণ আরবি শব্দ – অছিলা, অজুহাত, অন্দর, আকবর, অক্কেল, আখের, আজব, আতর, আদত, আদব-কায়দা, আদায়, আদালত,আবির, আমল, আমানত, আমিন, আমির, আমির-ওমরা, আয়েশ,আরক,আরজ,আলখাল্লা, আলবৎ, আলাদা, আলোয়ান,আসবাব,আসল, আসামী, আহাম্মক,ইজারা, ইজ্জত, ইনকিলাব, ইনাম, ইন্তিকাল,ঈমান, ইমারত, ইশতাহার,ইশারা, ইসলাম, ইস্তফা, ইহুদি, ঈদ, উকিল, উজির, উসুল,এক্তিয়ার, এজমালি, এজলাস, এজাহার, এলাকা,ওকালত, ওজন,ওয়ারিশ, কদম, কদর, কবর, কবলা, কবুল, কয়েদ, করার, কলপ, কলাই, কসবা, কসাই, কসুর, কাওয়াল, কানাত, কাফন, কাফের, কামাল, কামিজ, কায়দা, কায়েম, কালিয়া, কাহিল, কিস্তি, কুদরত, কুমকুম, কুলুপ, কেচ্ছা, কেতা, কেতাব, কেরামতি, কেল্লাফতে, খতম, খতিয়ান, খবর, খয়রাত, খসড়া, খাজনা, খাতির, খাদিম, খাপ, খামচা, খারাপ, খারিজ- দাখিল, খালাস, খালসা, খালি, খাসা, খাসি, খেতাব,খেয়াল, খেসারত, খোলসা, খোলা, গজল, গড়গড়া, গরিব, গলদ,গাড়া, গায়েব, গুতা, গোসা, গোঁৎ, ছবি, ছাদ, জওহর,জনাব,জবাব, জমজমাট,জমা, জামানা, জমায়েত, জরিপ, জরিমানা, জলদি,জলসা, জল্লাদ, জাফরান, জালিয়াত,জাহাজ,জাহির, জিজিয়া, জিনিস, জিম্মা, জিরাত, জিরাফ, জুলুম, জেরা, জেহাদ, জৌলুস, জ্বালাতন, তওবা,তরফ, তর্জমা, তর্জা, তলব, তহবিল, তাকত, তাগিদ, তাজিয়া, তাজ্জব, তানপুরা, তামাম, তামিল, তারিখ, তারিফ, তালাক, তালিকা, তালিম, তালুক, তাঁবে,তুফান, তুলকামাল, তৈয়ার, তোড়া, তোফা, তোয়াক্কা, দখল, দজ্জাল, দফা, দফা-রফা, দলিল, দাওয়াই,দাখিল, দায়রা, দালার, দাঁও, দুনিয়া, দেনা, দোয়া, দোয়াত, দৌড়, দৌলত, নকল, নকমা, নগদ, নজর, নজির, নবাব, নসীব, নহবত, নহর, নাকাল, নাগাদ, নাজির, নায়েব, নিকা, নিকাশ, নিয়ত, নিশা, নূর, নেহাত, ফকির, ফক্কর, ফতুর, ফতে, ফতোয়া, ফরাশ, ফর্দ, ফসকা, ফসল, ফাজিল, ফানুস, ফায়দা, ফালাও, ফাঁক, ফি, ফিকির, ফুরফুর,ফুরসত, ফেরার, ফোয়ারা, ফৌজ, ফ্যাসাদ, বই , বকেয়া, বলদ, বন্দুক, বয়ান, বহর, বাকি, বাতিল, বাদাড়,বাদে, বিলকুল, বিলাত, বুরুজ,বেসাতি, বোরকা, মওকা, মকতব, মুকুব,মক্কেল, মজবুত,মজলিস, মজুত, মঞ্জিল, মতলব, মণ, মনিব, মফস্বল, ময়দান, ময়না, মর্জি, মলম, মাতব্বর, মাদ্রাসা, মানা, মাফ, মাফিক, মামলা, মামুলি, মারফত, মাল, মালিক, মালুম, মাল্লা,মল্লিক, মসলা, মশাল, মসজিদ, মসনদ, মহকুমা, মহড়া, মহরম, মহাল, মাশুল, মাসহারা, মিছরি, মিনতি, মিনার, মেকি, মজেজ, মেরাপ, মেরামত, মেহনত, মৌলবি, মৌসুমী, রকম,রকম-সকম,রদ, রদ-বদল, রপ্তা, রফা, রশি, রাইয়ত, রায়, রিপু, রুজু, রুবাই, রেওয়াজ, রোয়াক, লহমা, লাখেরাজ, লায়েক, লেপ, লেফাফা, লেবু, লোকসান, শখ, শয়তান, শরবত, শরাব, শর্ত, শলা, শহীদ, শুরু, সই, সাগয়াল, সড়কি, সদর, সন, সনদ , সফর, সুবুর, সলিতা,সহিস, সাকিন, সাকী, সাফ, সাবুর, সাবেক, সামাল, সাহেবসুবা, সিকি, সিন্দুক, সুলতান, সুলুক, সেরেফ, হক, হজম, হদ্দ, হয়রান,হরফ, হাওদা, হাওয়া, হাসিল, হিকমত, হিম্মত, হিসাব-নিকাশ, হিস্যা, হুকুম, হুকো, হুজ্জত, হুবহু, হুর, হুলিয়া, হেফাজত,হ্যাবলা।
 আদালত সংক্রান্ত শব্দগুলোর বেশিই ভাগই আরবি শব্দ।
 উকিল, মুক্তারমুহুরি মিলে। এজলাস বা আদালতে গিয়ে মুন্সেফ ও হাকিমের কাছে মহকুমা,ফরিয়াদিমামলারআসামীর বাদি ও বিবাদিরমূলতবিরখারিজ করতে হুকুম বা রায় চেয়েছে । কমলাকান্তের জবানবন্দিতে অনেক আরবি শব্দ আছে।
 কিন্তু কোট, জর্জ, ব্যারিস্টার, এডভোকেট ইংরেজী শব্দ।
 একজন এলেম বা আলেমদোয়াতকলম দিয়ে কিভাবেগায়েব সম্পর্কিত কেচ্ছা, কানুন লিখিতেছেন।
 লিখার শেষে সন ও তারিখ লিখলেন। (সন-আরবি, তারিখ-ফারসি)
 কিতাবে কাগজ থাকে তাই, কাগজ-ফারসি শব্দ।
 আইন, জবানবন্দি ধরে নিবে ফারসি, না থাকলে আরবি হবে।
 একজন মোনায়েম, মৌসুমি, মুসাফির,জাহাজে, করে সাগর পাড়ি দিয়ে বিলেত রওনা করলেন। এবং ওযু করে তসবি, তবলা, তানপুরা, নিয়ে হালাল, হারাম, সম্পর্কে জিকির করিতেছেন।
 ছন্দে কিছু শব্দ মনে রাখার উপায়
মহকুমার মুন্সেফ,উকিল ও মুক্তারগরীব ফকিরমিসকিনেরকেচ্ছা শুনে দোয়াত কলম বই শখের ছবি,বোরকা ও মলম এই মৌসুমীতেনগদবাকীতে খারিজ করতে আইন করে আদালতেহুকুমের রায় ঘোষনা করে।

ফারসি শব্দ (পার্সি বা ইরানের ভাষা )

আরবি র্তুকি ও ফারসি শব্দ র্ফাসি পরচিয় বাংলায় ব্যবহৃত হয় মুসলমানদরে যাবতীয় র্ধমীয় শব্দ, আইন-আদালত সর্ম্পকতি শব্দ ,রাজদরবার সর্ম্পকতি শব্দ, যুদ্ধ-বিগ্ররের শব্দ, শিক্ষা সংস্কৃতি ও সভ্যতা সাহত্যি বিষয়ক শব্দ, ব্যবসা-বাণিজ্য শব্দ, বিদেশি জাতের নাম বিভিন্ন পেশা দৈনন্দিন জীবনের জিনিসপত্ররে নাম ইত্যাদি অগণিত শব্দ থেেক বাংলায় এসেছে।
ফারসি শব্দ তিন ভাবে বাংলা ভাষায় এসেছে ।
১। ধর্ম ২। প্রশাসনিক / সাংস্কৃতিক ৩। বিবিধ।
গুরুত্বপূর্ণ ফারসি ভাষা –
আইন, আওয়াজ, আঙ্গুর, আচার, আজাদ, আতশবাজি, আদমশুমারি, আন্দাজ ,আফগান, আফসোস, আবরু,আবাদ, আমদানি, আমেজ, আয়না, আরজি, আরাম, আলু ,আস্কারা, আসমান ,আসান ,আস্তানা, আস্তে, ইয়ার, ইয়ার্কি, ইরানি, উমেদার, একটা, একতারা, একদম, একরোখা, এলাচি, এলেমদার, ওস্তাদ, কন্দ, কম, কমজোরি, কশাকশি, কাগজ, কানাচ, কাবুলি, কামান, কারখানা, কারচুপি, কারবার, কারসাজি, কারিগর, কিনারা, কিস্তিমাত, কুচি, কুস্তি, কোমর, খঞ্জর, খরগোশ, খসখস, খাক, খাজা, খানদানি, খানসামা, খাম, খালাসি, খুচরা, খুন, খুনি, খুশি, গম্বুজ ,গরম, গর্দান, গালিচা, বালিশ, গুজরাট, গোনাগার, গুলবাগ, গেরো, গোমস্তা, গোয়েন্দা, গোরস্থান, গোলাপ, গ্রেফতার, চরকা, চর্বি, চশমখোর, চশমা, চাকর, চাকরি, চালাক ,চাঁদা, চিজ, চেহারা, জঙ্গল, জখম ,জঙ্গি, জবরদস্তি, জবান, জবানবন্দি, জমি, জর্দা, জাদু, জান, জানোয়ার, জামদানি, জামা, জায়গা, জ্বালা, জিঞ্জরি, জিন্দাবাদ, জিন্দেগি ,জেনানা, জের, জোর, জোরদার, ঝাড়, তক্তপোশ, তরমুজ, তাকিয়া, তাজা, তীর, তেজ, তোতা, তোশক, তোষামোদ, দপ্তর, দপ্তরী, দম, দমকা, দরকার, দরজা, দরদ, দরদালান, দরবার, দরবেশ, দর্জি, দাগ, দাঙ্গা, দারোগা, দারোয়ান, দালান, দিলখোশ, দিস্তা, দোস্ত, দুশমন, দেমাক, দেয়াল, দেরি, দোকান, দোতারা, নসিব, নামাজ, নমুনা, নরম, নর্দমা, নাচার, নাস্তা, নামি, নালিশ, নিমকি, নিশান, নিশানা, নোঙ্গর, পছন্দ ,পনির, পয়দা, পরগনা, পরী, পরোয়া, পর্দা, পলক, পাইকারি, পায়জামা,পাজি, পাঞ্জাব,পাঞ্জা, পাঞ্জাবী, পাফোশ, পাঁয়তারা, পায়া, পারসি, পালোয়ান, পাল্লা, পিলসুজ, পুল, পুলিন্দা, পেয়াদা,পেশকার, পেশা, পেশাদার, পেঁচ, পোদ্দারী, পোলাও, ফোশ, পোশাক, পোস্ত, পোস্তা, ফন্দি, ফরমান, ফরমায়েশ, ফরিয়াদ, ফার্সি, ফাঁদ, ফিরোজা, বখরা, বখশিশ, বগল, বজায়, বদ, বনাম, বারবী, বারবার, বারুদ, বালখানা, বালাপোষ, বাজিকর, বাজু, বাজেয়াপ্ত, বাদশাহী, বাদাম, বাদামী, বান্দা, বিবিজান, বিমার, বীমা, বুনিয়াদি, বুলবুল, বেগার, বেচারা, বেজায়, বেজার,বেতার, বেদম, বেনামী, বেশ, বেশি, বেহুশ, ব্যারাম, মগজ, মজা, মজাদার, মালিশ, মাহিনা, মিঞা, মজুর, ময়দা, মরদ, মরিচ, মর্মর, মশক, শস্ত, মস্তান, মাকু, মিসি, মিহি, মিহির, মীনা, মুফত, মুর্দা, মেওয়া, মেথর, মোম, মোরগ, মোহর, রওনা, রংমহল,রঙবাজ, রঙিন, রপ্তানি, রসদ, রসিদ, রাস্তা, রাহাজানি, রুজি, রুমাল, রেজকি, রেশম, রেহাই, রোখ, রোজ, রোজগার, লঙ্গরখানা, ল¯কর, লাগাম, লাল, শানাই, শামলা, শায়েস্তা, শাল, শালগম, শিরোনাম, শিক, শিকার, শরম, শাখা, শাদী, শানাই, শৌখিন, সবজি, সবুজ, সর, সরকার, সরজমিন, সরবরাহ, সরাসরি,সর্দার, সর্দি, সস্তা, সাজ, সাজা, সাদা, সাবাস, সরজমিন, সুদ, সুপারিশ, সুর্মা, হপ্তা, হামেশা, হুশ ,হুশিয়ার ইত্যাদি।

Related  সমাস_ও কারক মনে রাখার শর্টকাট_টেকনিক।

মূল আরবি বাংলা তরজমা-ফারসি বাংলা অর্থ তৎসম/ সংস্কৃত
আলাহ খোদা প্রভু, স্রষ্টা
সালাত নামাজ প্রার্থনা
সাওম রোযা উপবাস
জান্নাত বেহেশত স্বর্গ
জাহান্নাম দোযখ নরক
কবর গোর শ্মশাণ
 যার তরজমা পাওয়া যায় না – তা আরবি শব্দ।
 হজ, যাকাত, কোরবানী, ঈদ, কিয়ামত, হাদীস, তওবা, ঈমান, গোসল।
(অর্থাৎ আল্লাহকে খোদা নামে ডাকা যায় কিন্তু হজ বা যাকাতকে অন্য নামে ডাকা যায় না)।
 আযান শব্দটির – আরবি ও ফারসি দুটো ভাষারই শব্দ।
১। প্রশাসন সংক্রান্ত :-
একদিন বাদশাহ্ ও বেগমদরবারেরসরকারি (সরকার) চাকুরি একজন বান্দাকে দিতে চাইলেন। সে মেথর ছিল বলে দফতরে কয়েকজন জানোয়ারবদমাস বলে হাঙ্গামা শুরু করেলেন। এতে বাদশাহ্দস্তখতকৃতনালিশ গ্রহন করে তাদের বরদাশত না করে বখশিশের পরিবর্তে বরখাস্ত করলেন। জল্লাদকে বললেন আদমিদেরজিন্দাগর্দান কাটা হোক।(তবে রাজা – তৎসম শব্দ)
২। চশমা কারখানায়কারিগররা তৈরী করে বাজারের দোকানে নিয়ে পাইকারী ও খুচরা বিক্রয় করে। ভাল মানের চশমা আমদানি ও রপ্তানি করা হয়। খুচরা বিক্রয় হয় দুই ভাবে নগদ ও বাকি। আর এই দুটি আরবি শব্দ।
৩। গ্রাম্য বাদ্যযন্ত্র :- অর্থাৎ যেগুলোর সাথে কেবল তার বা তারা যুক্ত থাকে তা কোন চিন্তা ছাড়াই ফারসি শব্দ। একতারা, দোতারা, সেতারা, সেতার, বেতার ইত্যাদি।
৪। রং দিয়ে গঠিত শব্দ (লাল, সবুজ, সাদা, আসমানি, বা আকাশী), তবে নীল তৎসম শব্দ।
৫। জমি, জাম, জম, দিয়ে গঠিত শব্দ জমিদার, জমজম, জামদানি, জামাই। জামাই বিয়ে করার সময় পাঞ্জাবি পাজামা পরে মুখে রুমাল দেয়। বিয়েতে পোলাওবিরিয়ানীজর্দা এবং মোরগ ও মুরগী রোষ্ট দেওয়া দেয়া হল। জামাই এসব না খেয়ে আলু তরমুজশালগম ও মরিচেরসবজি খাওয়া শুরু করল।
৬। বাগান, বাগিচা, গোলাপ, গালিচা।
৭। নামাজরোযানা রাখলে গুনাহ হয়, তাই বেহেস্তে যেতে পারবে না। তখন পয়গম্বর ও ফেরেস্তারাখোদার নির্দেশে দোযখে নিয়ে যাবে।
 ছন্দে কিছু শব্দ মনে রাখার উপায়
ভাইয়েরা – নামাজ রোযা করিলে হয় বেহেশত আর গুনাহতে হয় দোজখ ; তখন ফেরেশতাপয়গম্বরের সুপারিশে মাফ করিবেন খোদা। বাদশা চশমাকারখানারদোকানে রেখে দরবারে যেয়ে দস্তখতে তারিখ লিখে বান্দা মেথরের জবানবন্দি নেন। আজকালআমদানিরপ্তানিতেজিন্দাবদমাসজন্তুজানোয়ারেরহাঙ্গামারনমুনা দেখা যায়।

পর্তুগিজ শব্দ

খ্রিস্ট ধর্ম, ফলমূল ও কৃষিজাত দ্রব্য এবং আসবাবপত্র ইত্যাদি বিষয়ের কিছু পর্তুগিজ শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হয়।
যেমনঃ ক্রুশ, গীর্জা, পাদ্রি, যিশু, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, কামরাঙা, কপি, বাতাবি, তামাক, আতা, চাবি, জানালা, তোয়ালে, বালতি, বোতল, আলমারি, বারান্দা, গুদাম, গামলা, সাবান, ফিতা, পেরেক, কামরা, টুপি, আলপিন, আলকাতরা, কামিজ, বোতাম, মিস্ত্রি, নেলাম, মাশুল, বোমা, পিস্তল, আচার, বাসন, সাগু ইত্যাদি।
১। খ্রিষ্টধর্ম সংক্রান্ত শব্দ গুলো পর্তুগিজ শব্দ-যিশু, গীর্জা, পাদ্রি, ক্রুশ, মেরি, মাইরি।
২। জানালারপাশে বারান্দায়কেদারায় বসে আচারমার্কাপাউরুটি খাবার খেয়ে পেটে বেহালা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তুর্কি শব্দ
উজবুক, উর্দি,উর্দু, কঞ্চি, কাঁচি, কাবু, কুর্নিশ, কুলি, কোর্মা, খাঁ, খান, খোকা, চকমক, চাকু, চেক, চোগা, ঝকমক, ঠাকুর, তকমা, তালাশ, তুর্ক, তোপ, দাদ, নান, নানী, বাবা, বাবুর্চি, বাহাদুর, বোঁচকা, বেগম,মুচলেকা, মোগল, লাশ, সওদাগাত ইত্যাদি।
১। পারিবারিক শব্দ :- বাবা, চাচা, দাদা, নানা, খালা, খোকা, খুকি, ঠাকুর। (কিন্তু মা, ভাই, বোন-তদ্ভব বা খাঁটি বাংলা শব্দ)।
 মোঘলখানাবাহাদুরেরলাশঝকমক করছিল। তখন দারোগাকাঞ্চি হাতে বাবুর্চি ও চাকরকে তোপ দিচ্ছেলেন, কিভাবে কুলিরাকাচিঁ দিয়ে খাঁ সাহেবকে কাবু করলেন। দারোগারতোপের মুখে বাহাদুরেরদাদা ও নানাচাকরকেবাবুর্চিরচাকু দিয়ে কুর্নিশ করে বেগমের লাশ কাটতে বলেন।
 ফরাসি (ফ্রান্সের) ঃ- আঁশ, শেমিজ, কার্তুজ, দিনেমার, কুপন, ওলন্দাজ, ইংরেজ, কাফে, বুর্জোয়া, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।
একজন ইংরেজ ও একজন ওলন্দাজ মিলে আঁতাত (গোপন চুক্তি) কনতে রেঁনেসারেস্তোরাঁ বা ক্যাফে গেলেন। কুপন দেওয়া হলে তারা বলল এক জিপো( গুদাম) কার্তুজ (গুলি) খাব।
 হিন্দি ঃ- আচানক, আচ্ছা, খানাপিনা, চরখা, চিজ, চানাচুর, চাহিদা, ইস্তক, কাহিনী, খাট্টা, চামেলি, টহল, পানি, তাগড়া, ফালতু ইত্যাদি।
চামেলিছিনতাই কালে তরকারিওয়ালাকেডেরা করে পানিতে ফেলে দিলেন। টহল
পুলিশজলদি ধরতে এল তাদের ফালতু বলে ঠান্ডা মেরে মিঠাই খাওয়ালেন।
 জাপানি : রিক্সা, হাসনাহেনাসামপান,হারিকিরি, প্যাগোডা ইত্যাদি।
 পাঞ্জাবি : শিখ, তারকা, চাহিদা।
 চীনা :চা, চিনি, লিচু, লুচি,এলাচি ইত্যাদি।
 স্পেনিশ : তামাক।
 মায়ানমার : লুঙ্গি, ফুঙ্গি, (সেলাই ছাড়া লুঙ্গি)
 ওলন্দাজ: ইস্কাপন, হরতন, রুইতন, চিরাতন, টেক্কা, তুরুক।
বর্মি শব্দ ঃ কিয়াং, ফুঙ্গি, লুঙ্গি ইত্যাদি।
 মনে রাখার উপায় :
(হরতালে গুজরাটে খদ্দর পাওয়া যায় না)
চকলেট – মেক্সিকান, ক্যাঙ্গারু, – অস্ট্রেলিয়ান, জেব্রা, – দক্ষিন আফ্রিকান, কিন্ডার গার্টেন – জার্মানি বা ইংরেজি থেকে এসেছে।

Related  উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক ও সাহিত্যকর্ম।

মিশ্র শব্দ

আইনজীবি = ফারসি+তৎসম/আরবি+তৎসম।
হেড মৌলভী = ইংরেজী+ফারসি।
শাকসবজি = তৎসম+ফারসি।
মৎসজীবি = তৎসম +ফারসি ।
খ্রিস্টাব্দ = (খ্রিস্ট+অব্দ) ইংরেজী + তৎসম
রাজা-বাদশা = তৎসম+ফারসি
পকেটমার = ইংরেজী+বাংলা
চৌ-হদ্দি = ফারসি+আরবি (চারদিকের সীমানা)
বোমাবাজ = পর্তুগিজ+ফারসি
হাট-বাজার = বাংলা+ফারসি
হাটবাজার = বাংলা+ফারসি
হেড -পন্ডিত = ইংরেজী+তৎসম
ডাক্তার-খানা = ইংরেজী+ফারসি
(মনে রাখবে – তৎসম শব্দ ছাড়া অন্য কোন যেমন – তদ্ভব, অর্ধতৎসম, দেশি বা বিদেশি কোন শব্দে ষ, ণ, যুক্ত হয় না)।
গঠনগত অনুযায়ী শব্দ – ২ প্রকার ঃ
১। মৌলিক শব্দ ২। সাধিত শব্দ
মৌলিক শব্দ : যে শব্দকে বিশ্লেষণ বা ভাঙ্গলে ঐ শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ পাওয়া যায় না। যেমন – হাত, গোলাপ, কলম, ফুল, বক, বই ইত্যাদি। এক অক্ষর বিশিষ্ট শব্দগুলো।
মৌলিক শব্দকে-প্রাতিপদিক বা বিভক্তিহীন নাম শব্দ বা নাম প্রকৃতি বা শব্দ প্রকৃতি বলা হয়। মৌলিক শব্দগুলোই হচ্ছে ভাষার মূল উপকরণ।
সাধিত শব্দ ঃ মৌলিক শব্দ ব্যতীত অন্য সকল শব্দ।
যেমন- হাতা= হাত + আ, গোলাপি = গোলাপ + ঈ, এছাড়া কলমি, ফুলেল ইত্যাদি।
অর্থগত অনুযায়ী শব্দ তিন প্রকারঃ
১। যৌগিক শব্দ ২। রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ৩। যোগরূঢ় শব্দ
যৌগিক শব্দ ঃ যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বা ব্যবহারগত অর্থ দুটো একই থাকে তাকে যৌগিক শব্দ বলে।
 গোলাপি= গোলাপ + ঈ (গোলাপের মত)।
 দৌহিত্র = দুহিতা (মেয়ে)+ষ্ণ্য (কন্যার পুত্র, নাতি)।
 বায়ুআনা = বাবু + আনা (বাবুর মত ভাব)
 মিতালি = মিতা (বন্ধ) + আলি (বন্ধুর মত ভাব)
 পাগলামি = পাগল + আমি (পাগলের মত ভাব)।
 মধুর = মধু + র (মধুর মত মিষ্টি গুন যুক্ত)
 গায়ক = গৈ + ণক (অক) (গান করে যে)।
 কর্তব্য = কৃ + তব্য (যা করা উচিত)
 চিকামারা = চিকা + মারা (দেওয়াল লিখন)।
 চালক = চল + অক (যে চালায়)
 পক্ষী= পক্ষ + ইন (যার পক্ষ বা ডানা আছে)।
 পিতৃহীন= পিতা + হীন ( যার পিতা নেই)।
(ব্যুৎপত্তিগত অর্থ মানে হল – শব্দটি বিশ্লেষণ করলে আমরা যে অর্থ পাই; আর ব্যবহারগত অর্থ হল- বাস্তবে আমরা শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার করি)।
 ব্রাকেটে ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারগত অর্থ দুটোই দেখানো হয়েছে)।
 ছন্দের বন্ধনে ঃ মধুরগায়ককর্তব্য না করে বায়ুআনা ভাব করে পিতৃহীনমিতালী এবং দৌহিত্রকে নিয়ে চিকামারতে গেলেন।
 রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ :- যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারগত অর্থ দুটো একেভারেই ভিন্ন অর্থাৎ এক নয়, তাকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে।
 গবেষণা = গো (গরু)+এষণা (খোঁজা)
ব্যবহারগত অর্থ – ব্যাপক অধ্যয়ণ ও পর্যালোচনা। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ- গরু খোঁজা।
 হস্তী = হস্ত+ইন (হস্ত আছে যার) ।
 রাখাল = রাখ+আল (যে রাখে বা রক্ষা করে) ।
 প্রবীণ = প্র+বীণ (প্রকৃষ্ট রূপে বীন বাজাতে পারেন যিনি) ।
 বাঁশি = বাঁশ+ই (বাঁশ দিয়ে তৈরী যে কোন বস্তু)।
 সন্দেশ = সম্+দেশ ( কোন দেশের সংবাদ) ।
 তৈল = তিল+ষ্ণ ( তেলের তৈরি কোন পদার্থ)
 শ্বশুর = শ্ব(খাওয়া) +শুর (দ্রুত) – (দ্রুত খায় যিনি)
 হরিন = হৃ+ইন (হৃদয় হরনকারী)।
 মাংস = মা+অংশ (মায়ের অংশ) ।
 পলাশ = পল (মাংস) + আশ (ভাত) -(মাংস মিশ্রিত ভাত)।
 জ্যাঠামি = জ্যাঠা+আমি (চাচার মত দেখতে)।
 পাঞ্জাবি = পাঞ্জাব+ই (পাঞ্জাবের অধিবাসী)।
 গবাক্ষ = গো + অক্ষি (গরুর চোখ )।
 ছন্দে শিখি ঃ তেলেভাজাসন্দেশ খেয়ে এক প্রবীণ গবেষণা করে পাঞ্জাবী পরে হস্তীরপিঠে চড়ে বাঁশি বাজায়।
 যোগরূঢ় শব্দ :- সমাস নিষ্পন্ন যে পদটি সম্পূর্ণ ভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুযায়ী
না হয়ে বিশেষ অর্থ জ্ঞাপন বা প্রদান করে তাই যোগরূঢ় শব্দ। যেমন ঃ
 জলধি = জল ধারণ করে যা (গ্লাস, নদী, সাগর, পুকুর, বোতল জল ধারন করতে পারে) যোগরূঢ় অর্থ – সমুদ্র।
 জলদ = জল দেয় যে (বৃষ্টি, টিউবওয়েল, ওয়াসা ইত্যাদি জল দেয়)
যোগরূঢ় অর্থ – মেঘ।
 বলদ = বল দেয় যে (মেশির বা শক্তিশালী কোন প্রানী বল বা শক্তি দিতে পারে) যোগরূঢ় অর্থ – বোকা ।
 রাজপুত্র = রাজার পুত্র (রাজার যে কোন পুত্র হতে পারে) যোগরূঢ় অর্থ – জাতি (তুচ্ছার্থে বা অবজ্ঞার্থে) কিন্তু রাজপুত্র -যৌগিক শব্দ ।
 সুহৃদয় = সুন্দর হৃদয় যার (যে কোন ব্যক্তিরই সুন্দর হৃদয় থাকতে পারে)
যোগরূঢ় অর্থ – বন্ধু।
 উদ্ভিদ = মাটি ভেদ করে উঠে যা (আগ্নেয়গিরি, বিল্ডিং, কাঁদা মাটি ভেদ করে উঠতে পারে) যোগরূঢ় অর্থ – বৃক্ষ ।
 পষ্কজ = পষ্কে জন্মে যায় (শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল প্রভৃতি নানাবিধ উদ্ভিদ পষ্কে বা কাঁদায় জন্মে) যোগরূঢ় অর্থ – পদ্মফুল ।
 সরোজ = সরোবরে (পুকুর, দিঘি) জন্মে যা (শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল প্রভৃতি নানাবিধ উদ্ভিদ পুকুর বা দিঘিত

Similar Posts