চাকরির বাজারে নতুনরা ইংরেজি প্রস্তুতি যে ভাবে নিবেন।
চাকরির প্রস্তুতির বাজারে যারা নতুন, তারা কিভাবে ভাবে ইংরেজির প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে পারে।
চাকরির প্রস্তুতি যদি একটা শরীর হয়, ইংরেজি আর ম্যাথ হলো তার ডান হাত ও বাম হাত। এ দুটোকে অবহেলা করে ভালো করার সুযোগ নেই।
ইংরেজিতে ভীতি বা দুর্বলতা কেন তৈরি হয়?
০১. স্কুল-কলেজে থাকাকালীন আমরা ইংরেজির বেসিক জানার পরিবর্তে পাস করার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতাম। ফলে পাস করা হলেও মূল ভিত্তি তৈরি হতো না। আমার মতো সাধারণ মানের অধিকাংশ স্টুডেন্টরাই পরিক্ষার আগে স্যারদের কাছে সিলেবাস নিয়ে গিয়ে অনুরোধ করতাম, স্যার প্যারাগ্রাফ দাগায়া দেন যাতে কমন পরে। তারপর সেগুলো পরিক্ষার আগের রাতে আধা কাঁচা গিলে পরিক্ষার হলে গিয়ে বমি করে কোনো রকম পাস করে সন্তুষ্ট থাকতাম। কখনও দু পেজ ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং লিখতামও না বা এটা যে ভবিষ্যৎ জীবনে কত দরকার তা বুঝতামও না। ফলে হুট করে এখন ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং লিখতে গেলে নিজেকে অসহায় লাগে। অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেও আমরা দু পেজ ইংরেজি বানিয়ে লিখতে পারি না বলে নিজেকে কতক্ষণ যা তা বলে বকে সেদিনের মতো পড়ার ইতি টেনে চলে যাই দিনের পরবর্তী কর্মসূচিতে।
০২. ইংরেজি শব্দার্থ শেখা বেশ সময় সাপেক্ষ ও ধৈর্যের ব্যাপার হওয়ায় এটাতে অনীহা থাকে। তাছাড়া সিলেবাসে সরাসরি ভোকাবুলারি থেকে প্রশ্ন না আসাতে এটা নিয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। অথচ ভোকাবুলারি হলো ইংরেজিতে ভালো করার অন্যতম হাতিয়ার।
০৩. বাসায় অনেক ইংরেজি শেখার বই থাকলেও কোনো বই ই পুরোপুরি শেষ না করা। বইয়ের অল্প কয়েক পেজ পড়ে সেটা রেখে দিয়ে অন্য আরেক বই কেনা এবং সেটাও কদিন পর বুক সেলফে সাজিয়ে রাখা।
চাকরির প্রস্তুতিতে কিভাবে ইংরেজির প্রস্তুতি শুরু করা যেতে পার :
০১. ফিরে যেতে হবে শিকড়ে। একটা ভালো ফাউন্ডেশন ছাড়া যেমন একটা উঁচু বিল্ডি দাঁড়াতে পারেনা তেমনি বেসিক শক্ত করা ছাড়া ইংরেজিতে ভালো করা সম্ভব না।এটা সময় সাপেক্ষ। ফুটপাতের বইয়ের মতো ‘৩০ দিনে ইংরেজি শিখুন’ টাইপ টার্গেট নিলে বাচ্চা পয়দা তো হবেই না, উল্টো মিসক্যারেজ হবে। শেষে ব্যথা সইতে না পেরে ডিপ্রেশনে চলে যাবেন। এখানে যাওয়াই এখন সবচেয়ে সহজ। অন্তত ৩-৫ টা মাস সময় দিতে হবে অধ্যবসায়ের সাথে।
০২. স্কুল কলেজের ইংরেজির বেসিক বইগুলো যাদের সংগ্রহে আছে সেখান থেকেই বেসিক শিখতে পারলে পারলে ভালো। ২০০৯ সালে স্কুলে থাকতে কেনা সবার পরিচিত ‘চৌধুরী এন্ড হোসেন’ এর সবুজ মলাটের বইটা এখনও আমার কাছে আছে। কোনো কনফিউশান চেক করতে হলে সেটা আগে খুঁজি। পরিক্ষা শেষ হলে আমাদের প্রথম কাজ হলো পুরানো বইগুলো বেঁচে নিজেদের বোঝা মুক্ত করা। এক ইন্টারের স্টুডেন্টকে ইংরেজি পড়াতাম। কদিন আগে খবর পেলাম পরিক্ষার পর কেজি দরে ওর ইংরেজি বইটাও সেল করে দিছে এজন্য যাতে ঘরে অপ্রয়োজনীয় বোঝা না বাড়ে। এজন্যই কবিগুরু বলেছেন, “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু।” আমি বিশ্বাস করি আমার পরিচিত সে ভদ্রলোক যদি চাকরির বাজারে কখনও আসে তাহলে বুঝবে সোনার জিনিসরে ভাঙ্গারী মনে করে কেমনে বেঁচে দিছে। এ বইগুলোকে আপন করে নিতে হবে আবার। কারণ বইগুলো আমাদের পরিচিত। অনেক স্মৃতি জড়ানো। তাই পড়েও বিরক্তি খুব একটা বিরক্তি লাগার কথা না। এই বইগুলো থেকে ধরে ধরে নোট করে শিখতে পারলে সেরা হবে। নোট করার ক্ষেত্রে শুরুতেই বেশি ডিটেইলস এ যাবার দরকার নেই। তাহলে সাঁতার শেখার আগেই তলিয়ে যেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, Sentence চাপ্টার নোট করার সময়। Sentence এর সংজ্ঞা দু লাইনে লেখা। তারপর নিচে এটা অর্থ অনুসারে ৫ রকম আর গঠন অনুসারে ৩ রকম এটা লিখে দু পাশে দুটা দেখা টান দিয়ে দেখানো। তারপর প্রতিটার সংজ্ঞা দু এক লাইনে লিখে দুটা করে উদাহরণ পাশে লেখা। ব্যাস। শুরুতে এতটুক ধারণা নিয়ে আগে বাড়তে হবে। তারপর Parts of Speech, Tense, verb এভাবে ধীরে ধীরে আগাতে হবে। কনফিডেন্স বাড়লে পরে সাগরেও সাঁতার কাটতে পারবেন। ম্যাথে কিভাবে ভালো করা যায় এমন প্রশ্নে অধিকাংশ সিনিয়ররাই বলেন ৯-১০ বোর্ড বই পড়তে হবে আগে। মানে ভিত্তি শক্ত করার বিকল্প নেই চাকরির বাজারে বিজয় কেতন উড়াতে হলে।
০৩. অনেকে শুরুতেই ব্যারন’স টোফেল, ক্লিফস টোফেল এটা সেটা দিয়ে শুরু করে একটা হযবরল পাকিয়ে ফেলে। একটা বাচ্চা প্রথমে হামাগুড়ি দেয় তারপর হাঁটে তারপর দৌঁড়ায়। এখন শুরুতেই দৌঁড়াতে গেলো তো মুখ থুবড়ে পড়ে বাকি পথ হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হবে। তাই আগাতে হবে ধাপে ধাপে। উদাহরণস্বরূপ: স্কুলে থাকতে একবার এক শ্রদ্ধেয় স্যার শুরুতেই simple, complex, compound কিভাবে এসবের চেঞ্জ করতে হয় তা বোঝাচ্ছিলেন। আমি বাদে অধিকাংশই জ্বী স্যার জ্বী বলতেছিলো। কারণ তখন আমার phrase & Clause সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিলো না। ক্লাস শেষে দু একজনের সাথে কথা বলে যা বুঝলাম এরাও আমার মত বোঝে নাই। জ্বী স্যার জ্বী স্যার বললে স্যার প্রশ্ন কম করেন তাই বলতেছিলো।
০৪. এবার আসি ভোকাবুলারির উপর কিভাবে আরো দক্ষতা বাড়ানো যায়। যারা ভার্সিটি এডমিশন টেস্টের প্রস্তুতি ভালোভাবে নিয়েছে তাদের এ অংশটা বেশ ভালো জানা থাকে। মাঝখানে একটা দীর্ঘ গ্যাপ থাকার কারণে রিভিশন না দেয়াতে সমস্যা হয়। চাকরির প্রস্তুতির জন্য ভোকাবুলারি পড়া শুরু করা যেতে পারে এডমিশনের সময় যে বইটা পড়া হয়েছিলো সেটা দিয়ে। আমার মনে পড়ে আমি adroit নামে একটা বইয়ের যত ওয়ার্ড ছিলো সব মুখস্থ করেছিলাম। দ্যান চাকরি বাকরি প্রস্তুতি শুরুতে আবার এটা রিভিশন দিয়েছিলাম। তারপর অন্যান্য বই কিনেছিলাম। যার যেটা আগে টুকটাক পড়া আছে সেটা দিয়েই শুরু করলে ভালো। তারপর ওয়ার্ড স্মার্ট বা জিআরই ওয়ার্ড বই সহ অন্যান্য বই পড়লে একটা কনফিডেন্স বাড়বে। এত প্রস্তুতিটা গোছানো হবে।
০৫. মোটামুটি একটা বেসিক হয়ে গেলে এবার প্রস্তুতির গভীরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে টোফেল সহ বাজারের যেকোনো পছন্দমতো বই থেকে চাপ্টার ধরে পড়ে বিগত বছর অনুশীলন করলে একটা পর্যায়ে নিজের উপর বিশ্বাস চলে আসবে। ইংরেজিতে ভালো করতে পরিশ্রম আর ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই।
Last but not the least, দৈনিক বা অন্তত একদিন পরপর হলেও দু পেজ করে ফ্রি হ্যান্ড রাইটি লিখতে হবে। এটা যে কত জরুরি রিটেন দেবার সময় বুঝবেন। ছোটবেলায় যখন অতিরিক্ত আবেগ উতলে পড়তো তখন ডায়রিতে সেগুলা ইংরেজিতে লিখতাম। ভুলভাল গ্রামার যাই হোক। পাত্তা দিতাম না। উদ্দেশ্য ছিলো কোনো পোলাপানের হাতে পড়লে যাতে সহজে পড়তে না পারে। মান ইজ্জতের জন্য একটা প্রথম স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার চাদর ব্যবস্থা করতাম আর কি। বিবি এডি রিটেন পরিক্ষার সময় অন্যান্য পার্ট সাধ্যমত কাভার করে শেষের টপিকটা লেখার জন্য ৫-৭ মিনিট সময় বাকি ছিলো। মার্কস প্রায় ১৫ ছিলো। কোনোমতে কনসেপ্টটা বুঝে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে গ্রামার আর স্পেলিং ঠিক রেখে কলম চালিয়ে গেছিলাম। কারণ ১৫ মার্কস ছেড়ে আসা মানে দ্যা গেইম ইজ ওভার। পরেরবার আসুন। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং মোটামুটি জানা ছিলো বলেই একটা ফাইট দিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম। তাই চাকরি পেতে চাইলে রিটেনে ভালো করতে হবে আর তার জন্য ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং হতে পারে গেইম চেঞ্জার।